বিজ্ঞানে বিশেষায়িত ইংরেজী শব্দের পরিভাষা করা উচিত কি না তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক রয়েছে। বাংলাদেশে প্রধানমত হলো, না, পরিভাষা যেমন আছে তেমনই থাক, উচ্চতর শিক্ষা ইংরেজী ভাষাতেই থাকুক। চার বছরের স্নাতকের পড়াশুনায় যেসব শব্দ ইংরেজীতে অভ্যস্ত হয়েছি তাকে বাংলা করার কি দরকার? হাস্যকর শোনাবে তো।
আপাতত এই বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে বায়োইনফরমেটিক্সকে বাংলায় জৈবতথ্যবিজ্ঞান হিসেবেই লিখি। অন্তত এই ব্লগে আমি এতটুকু স্বৈরাচারী হতেই পারি।
অণুজীববিজ্ঞান বিষয়ে সম্মান তৃতীয় বর্ষ পাঠরত অবস্থায় থেকে দেখেছি বায়োইনফরমেটিক্স নামটি অনেক জীববিজ্ঞানের শিক্ষার্থীর কাছেই আগ্রহ জাগিয়ে আসছে। নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সময়ে দেখেছি শিক্ষার্থীদের মধ্যে জৈবতথ্যবিজ্ঞানের প্রতি আকর্ষণের শেষ নেই। এই আকর্ষণের কারণ কতটুকু ন্যায্য, উৎস কতটা যথার্থ সে নিয়ে অবশ্য আমার সন্দেহ রয়েছে।
কেন বলছি এ কথা? কারণ যত যাই হোক, জৈবতথ্যবিজ্ঞানের মূল লক্ষ্যই হলো জীববিজ্ঞান গবেষণার বিভিন্ন প্রশ্ন সমাধানে অজস্র উপাত্তের যথার্থ বিশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদ্ধতি তৈরি ও প্রয়োগ। এসব পদ্ধতি তৈরির জন্য গণিত ও পরিসংখ্যানের সাহায্য নেয়া হয়। সাহায্য নেয়া হয় গণকবিদ্যা ও গণকযন্ত্রের। জটিল প্রোগ্রাম লেখেন গবেষকরা, ব্যবহার করেন। এই জটিল প্রক্রিয়া, পদ্ধতি, উপাত্ত বিশ্লেষণ উদ্ভুত মাথা-ঘুরানো বিভিন্ন চিত্র একজন নবীন গবেষককে মুগ্ধভাবে আকর্ষণ করতেই পারে। তবে শেষ বিচারে, এসব কিছুর শুরু কিন্তু জীববিজ্ঞান গবেষণাকে সাহায্য করার জন্য। জৈবতথ্যবিজ্ঞান জীববিজ্ঞানের সহায়তাকারী যন্ত্র মাত্র।
ভুল বুঝবেন না। আমি জৈবতথ্যবিজ্ঞানের সমালোচনা করছি না। আমি শুধু সতর্ক করছি। আমরা যাতে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুঁতে না দেই। জৈবতথ্যবিজ্ঞান জীববিজ্ঞানকে বদলে দিয়েছে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। শুধু জটিল প্রযুক্তি-প্রক্রিয়া-পদ্ধতির অলি-গলিতে মোহাবিষ্টের মতো হারিয়ে গিয়ে গবেষণার কারণ হারিয়ে না ফেলি তার কথাই বলছি।
জৈবতথ্যবিজ্ঞানের জ্বরে আক্রান্ত অনেকের ভিড়ে আমিও ছিলাম, আছি। অন্যান্য জ্বরাক্রান্ত আগ্রহীদের সাথে নিজের অভিজ্ঞতা ও ভাবনা-চিন্তা আলাপনের জন্য এই ব্লগের উদ্ভব। স্বাগত আপনাকে।
“বায়োইনফরমেটিক্স প্রজেক্টে কিভাবে ভাবতে হয়” এটা নিয়ে আমি একটা ছোট ই-বুক তৈরি করেছি। ই-বুকটি পেতে চাইলে নিচের ফর্মে আপনার নাম ও ইমেইল ঠিকানা দিন। আমি ই-বুকটি আপনাকে পাঠিয়ে দেবো।
ধন্যবাদ!
Leave a Reply